শরতের সোনালী রোদ, কাশ ফুল, শিউলি ফুলের সুগন্ধ আর ভেসে আসে না বন্দী বাঙালির জানালা ভেদ করে। নীল আকাশ জুড়ে পেঁজা তুলোর মতো মেঘেরা কোথাও যেন মিলিয়ে গেছে অতিমারির পটভূমিতে। ভারতবাসী এই অতিমারির নাম দিয়েছে লকডাউন। সেলিব্রেটির মৃত্যুশোক ঝরে পড়ছে খবরের কাগজে, টিভির পর্দায়। আর রাস্তায় খিদে পেলে যারা খাবার তুলে ধরত, কিংবা আমাদের পাচুর্যের একাংশ যাদের একটা বেলার খাবার... কই তাদের খবর পেলাম না তো। দৈনিক সংক্রমণ পাহাড় সমান, তাকে উপেক্ষা করে এবারের শারদীয়া। নিজের পরিবারকে নিয়েই কাটুক পুজোর প্রতিটি মুহূর্ত এতটাই কাম্য। খুশি সর্বত্র বিরাজমান, এমন অন্ধকারময় সময়েও খুশি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। একমাত্র জ্ঞান, বিচক্ষণতা আর সচেতনায় পারে এই অন্ধকারময় সময়ে খুশি খুঁজে এনে দিতে।
অসংখ্য সম্ভাবনা নিয়ে এগোতে থাকে মানুষের জীবন, যেখানে শুধু মৃত্যুই নিশ্চিত। অনিশ্চয়তার জীবনকে একটা পরিপুষ্ট রূপ দেয় সাহিত্য। এই ব্যস্তময় সভ্যতার যুগে যেদিকেই তাকাই দেখি শুধু অরাজকতা, হানাহানি আর মানুষের নির্বোধতা। বইয়ের দোকান ফাঁকা আর অরুচিকর সিনেমা হলের লম্বা লাইন। ওই চায়ের দোকান আর সিনেমা হলের মধ্যেই কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে পল্লীসমাজ আর কলেজ স্ট্রীট। এমনই পরিস্থিতিতে আমাদের অলীক চিন্তাভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে একটা ই-ম্যাগাজিন প্রকাশের ইচ্ছা। নেতিবাচক এবং ইতিবাচক উভয় প্রকার মানুষ নিয়েই আমাদের পথ চলা শুরু হয়। ধীরে ধীরে অধ্যাপক অভিলাষ দে মহাশয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের লক্ষ্য আরও সুস্পষ্টভাবে বাস্তবায়িত হয়। বহু সাহায্যের হাত এগিয়ে আসতে থাকে।
আজ আমরা সক্ষম হয়েছি যন্ত্রসভ্যতার ধোঁয়াশা থেকে বেরিয়ে এক অরণ্য স্থাপন করতে। এই অরণ্যের মাটিতে নেই হীরকরাজার পায়ের ধুলো, বাতাসে নেই ওই বিষাক্ত কলিজা থেকে বের হওয়া ধোঁয়া, আর নেই কসাইখানার ভিড়। আমাদের এই অরণ্যের খোলা বাতাসে নিজেদের আরও বিশালাকারে গড়ে তুলুক সাহিত্য প্রেমীর দল। তাদের স্নেহের চাদর বিছিয়ে দিক আমাদের সবুজ চলার পথে। বই পড়া ফিরে আসুক ঘরে ঘরে, আরও সমৃদ্ধ হোক সকল কবিবন্ধুদের লেখনী। কলমের দাগে ভরে উঠুক আমাদের অরণ্য। দাগ হোক দীর্ঘ যা স্পর্শ করতে পারে কোনও এক কোণে হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাশালী লেখকদের। আমাদের অরণ্যের প্রতিটি পত্রফলক ক্যানভাস হয়ে উঠুক, ফুটে উঠুক সাহিত্যিক ও শিল্পীর নিদর্শন। চারাগাছ আমরা রোপণ করে দিলাম, এটিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলার দায়িত্ব আমার, তোমার তথা সকলের। ভালোবাসায় থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আর কলমকে তলোয়ারের এবং বইকে বর্ম করে এগিয়ে চলুন এই অনিশ্চিত জীবনে।